বিধবা রমণী - হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় - কবিতাবলী

 বিধবা রমণী



ভারতের পতিহীনা নারী বুঝি অই রে!
না হলে এমন দশা নারী আর কই রে?
মলিন বসন-খানি অঙ্গে আচ্ছাদন,
আহা দেখ অঙ্গে নাই অঙ্গের ভূষণ!
রমণীর চির-সাধ চিকুর বন্ধন,
হ্যাদে দেখ সে সাধেও বিধি-বিড়ম্বন!
আহাঁ, কি চাঁচরকেশ পড়েছে এলায়ে!
আহা, কি রূপের ছটা গিয়েছে মিলায়ে!
কি নিতম্ব কিবা ঊরু, কিবা চক্ষু কিবা ভুরু,
কি যৌবন মরি মরি শোকে দগ্ধ হয় রে!


কুসুম চন্দনে আর নাহি অভিলাষ;
তাম্বুল কর্পূরে আর নাহি সে বিলাস;
বদনে সে হাসি নাই, নয়নে সে জ্যোতিঃ;
সে আনন্দ নাই আর মরি কি দুর্গতি!

হরিষ বিষাদ এবে তুল্য চিরদিন;
বসন্ত শরত ঋতু সকলি মলিন!
দিবানিশি একি বেশ, বারমাস সেই ক্লেশ;
বিধবার প্রাণে হায় এতই কি সয় রে!


হায় রে নিষ্ঠুর জাতি পাষাণ-হৃদয়,
দেখে শুনে এ যন্ত্রণা তবু অন্ধ হয়;
বালিকা যুবতী ভেদ করে না বিচার,
নারী বধ করে তুষ্ট করে দেশাচার।
এই যদি এ দেশের শাস্ত্রের লিখন,
এ দেশে রমণী তবে জন্মে কি কারণ?
পুরুষ দুদিন পরে, আবার বিবাহ করে,
অবল রমণী বলে এতই কি সয় রে?


কেঁদেছি অনেক দিন কাঁদিব না অার;
পূরাইব হৃদয়ের কামনা এবার।—
ঈশ্বর থাকেন যদি করেন বিচার
করিবেন এ দৌরাত্ম্য সমুলে সংহার;
অবিলম্বে হিন্দুধর্ম্ম ছারখার হবে
হিন্দুকুলে বাতি দিতে কেহ নাহি রবে!

দেখ্‌ রে দুর্ম্মতি যত চিরম্লেচ্ছপদানত—
বিধবার শাপে হায় এ দুর্গতি হয় রে।


হায় রে আমার যদি থাকিত সম্পদ,
মিটাতাম চিরদিন মনের যে সাধ;
সোণার প্রতিমা গড়ে বিধবা নারীর
রাখিতাম স্থানে স্থানে ভারতভূমির;
বিদেশের স্ত্রী পুরুষ এদেশে আসিত,
পতিব্রতা বলে কারে নয়নে হেরিত।
লিখিতাম নিম্নদেশে, “কি স্বদেশে কি বিদেশে,
রমণী এমন আর ধরাতলে নাই রে”


সে ধন সম্পদ নাই দরিদ্র কাঙ্গাল,
অনাথ-বিধবা-দুঃখ রবে চিরকাল
আমার অন্তরে গাঁথা; যখনি দেখিব
সুগন্ধ কুসুমে কীট তখনি কাঁদিব;
রাহুগ্রাসে শশধর, নক্ষত্র পতন
যখনি দেখিব, হায়, করিব স্মরণ
বিধবা নারীর মুখ! হায় রে বিদরে বুক,
ইচ্ছা করে জন্মশোধ দেশত্যাগী হই রে।
ভারতের পতিহীনা নারী বুঝি আই রে॥

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Section