চাতক পক্ষীর প্রতি - হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় - কবিতাবলী

 চাতক পক্ষীর প্রতি



কে তুমি রে বল পাখি,

সোণার বরণ মাখি,

গগনে উধাও হয়ে

মেঘেতে মিশায়ে রয়ে,

এত সুখে সুধামাখা সঙ্গীত শুনাও।



বিহঙ্গ নহ ত তুমি;

তুচ্ছ করি মর্ত্ত্যভূমি

জ্বলন্ত অনল প্রায়

উঠিয়া মেঘের গায়,

ছুটিয়া অনিল-পথে সুস্বর ছড়াও।



অরুণ উদয় কালে

সন্ধ্যার কিরণ-জালে

দূর গগনেতে উঠি,

গাও সুখে ছুটি ছুটি,

সুখের তরঙ্গ যেন ভাসিয়া বেড়াও।



আকাশের তারাসহ

মধ্যাহ্নে লুকায়ে রহ,

কিন্তু শুনি উচ্চস্বরে

শূন্যেতে সঙ্গীত ঝরে;

আনন্দ প্রবাহ ঢেলে পৃথিবী জুড়াও।



একাকী তোমার স্বরে

জগত প্লাবিত করে,

শরতের পূর্ণশশি

বিমল আকাশে বসি

কৌমুদী ঢালিয়া যথা ব্রহ্মাণ্ড ভাষায়।



কবি যথা লুকাইয়ে,

হৃদয়ে কিরণ লয়ে,

উন্মত্ত হইয়ে গায়,

পৃথিবী মাতিয়ে তায়

আশা মোহ মায়া ভয় অন্তরে জড়ায়।



রাজার কুমারী যথা

পেয়ে প্রণয়ের ব্যথা,

গোপনে প্রাসাদ পরে

বিরহ সান্ত্বনা করে

মধুর প্রেমের মত মধুর গাথায়।



যেমন খদ্যোত জ্বলে

বিরলে বিপিন তলে,

কুসুম তৃণের মাঝে

আতোষী আলোক সাজে

ভিজিয়া শিশির নীরে আঁধার নিশায়।



পাতায় নিকুঞ্জ গাঁথা

গোলাপ অদৃশ্য যথা

সৌরভ লুকায়ে রয়,

যখনি পবন বয়,

সুগন্ধ উথলি উঠি বায়ুরে খেপায়।


১০


সেই রূপ তুমি, পাখি,

অদৃশ্য গগনে থাকি,

কর সুখে বরিষণ

সুধাস্বর অনুক্ষণ,

ভাসাইতে ভূমণ্ডল সুধার ধারায়।


১১


কেবা তুমি জানি নাই,

তুলনা কোথায় পাই;

জলধনু চূর্ণ হয়ে

পড়ে যদি শূন্য বয়ে,

তাহাও অপূর্ব্ব হেন নাহিক দেখায়।


১২


যত কিছু ভূমণ্ডলে

সুন্দর মধুর বলে—

নবীন মেঘের জল

মুক্ত মাখা তৃণদল—

তোমার মধুর স্বরে পরাজিত হয়।


১৩


পাখী কিম্বা হও পরি

বল রে প্রকাশ করি

কি সুখ চিন্তায় তোর

আনন্দ হয়েছে ভোর?

এমন আহলাদ আহা স্বপ্নে দেখি নাই।


১৪


সুধা প্রণয়ের গীত

প্রাণ করে পুলকিত—


তারো সুললিত স্বর

নহে এত মনোহর

এত সুধাময় কিছু না হেরি কোথাই।


১৫


বিবাহ উৎসব-রব

বিজয়ীর জয়-স্তব,

তোর স্বর তুলনায়

অসার দেখি রে তায়—

মেটেনা মনের সাধ পূর্ণ নাহি হয়।


১৬


তোর এ আনন্দময়

সুখ-উৎস কোথা রয়,

বন কিম্বা মাঠ গিরি

গগন হিল্লোল হেরি—

কারে ভালবেসে এত ভুল সমুদয়।


১৭


তুমিই থাক রে সুখে

জান না ঔদাস্য দুখে,

বিরক্তি কাহারে বলে

জান না রে কোন কালে

প্রেমের অরুচি ভোগে হলাহল কত।


১৮


আমরা এ মর্ত্ত্যবাসী

কভু কাঁদি কভু হাসি,

আগে পাছে দেখে যাই

যদি কিছু নাহি পাই,

অমনি হতাশ হয়ে ভাবি অবিরত।


১৯


যত হাসি প্রাণ ভরে

যাতনা থাকে ভিতরে,

এ দুঃখের ভূমণ্ডলে

শোকে পরিপূর্ণ হলে

মধুর সঙ্গীত হয় কতই মধুর।


২০


ঘৃণা ভয় অহঙ্কার

দূরে করি পরিহার,

পাখি রে তোমার মত

না যদি কাঁদিতে হত,

না জানি পেতেম কি না আনন্দ প্রচুর।


২১


গগন বিহারী পাখী

জগতে নাহি রে দেখি,


গীত বাদ্য মধুস্বর

হেন কিছু মনোহর

তুলনা তুলিতে পারি তোমার কথায়।


২২


যে আহ্লাদ চিত্তে তোর,

অামারে কিঞ্চিৎ ওর

আনন্দ কর রে দান,

তা হলে উন্মাদ প্রাণ

কবিতা তরঙ্গে ঢেলে প্রকাশি ধরায়।


———-

শেলি বিরচিত স্কাইলার্কের অনুকরণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Section